ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ হয়েছে-আলী রীয়াজ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন রাস্তায় অভিনেতাকে সিদ্দিককে গণপিটুনি কারিগরি শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, চাকরির বাজারে তার চাহিদা নেই -সিপিডি আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে : সিইসি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গড়িমসি অপকর্ম বন্ধ করুন, নইলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে -নেতাকর্মীদের ফখরুল সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান বইপ্রেমী এক ডিসির গল্প গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই বোন ই-৮ ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন ২৫ কর্মী পুলিশের জন্য ১৭২ কোটি টাকায় কেনা হবে ২০০ জিপ সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে লিপ্ত থাকার অভিযোগ গ্যাস খাতে বছরে আর্থিক ক্ষতি বিলিয়ন ডলার নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি
ভয়ে-আতঙ্কে রয়েছেন রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও

উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতায় ৬ মাসে ২৬ খুন

  • আপলোড সময় : ২০-০৬-২০২৪ ০৯:৪২:৩৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৬-২০২৪ ০৩:২০:২৪ পূর্বাহ্ন
উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতায় ৬ মাসে ২৬ খুন
রামু (কক্সবাজার) থেকে আবু তালেব সিকদার
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহিংসতায় গত ৬ মাসে ২৬ জন খুন হয়েছেন। এই খুনগুলো হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত। এদের মধ্য ৪ জন ক্যাম্পে স্বেচ্ছায় ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছিলেন। মূলত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যার পরই ক্যাম্পে নিজেদের নিরাপত্তায় তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োজিত হন।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাত ধরেই ক্যাম্পগুলোতে অত্যাধুনিকসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। ফলে বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ভয়ে-আতঙ্কে রয়েছেন।
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, শিবিরে প্রায় এক ডজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যরা প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।
পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) তথ্য মতে, শরণার্থী শিবিরে চাঁদাবাজি ও মাদক চোরাচালানকে ঘিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। এতে চলতি বছরের শুরু থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত চারজন কমিউনিটি নেতাসহ ২৬ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালে হত্যার শিকার হন ৬৪ জন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে ১৩২টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যার শিকার অধিকাংশই ছিলেন রোহিঙ্গা নেতা বা মাঝি। গত ১৪ মে উখিয়ার একটি শিবিরের হেড মাঝি মোহাম্মদ ইলিয়াসকে (৪৩) ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে আরসার বিরুদ্ধে। এর আগে ৬ মে উখিয়ার বালুখালী শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা জাফর আহমদকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ধারণা করা হচ্ছে, সেই হত্যাকাণ্ডেও আরসা জড়িত। তার আগের দিন বালুখালীর রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরএসও) সদস্য নুর কামালকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা নুর হোসাইন বলেন, ক্যাম্পে হঠাৎ ফের সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। যার কারণে ক্যাম্পে মারামারি-খুনখারাবির ঘটনা বাড়ছে। মূলত আরসা-আরএসও’র মধ্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা প্রতি রাতেই ঘটছে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি জানান, শিবিরের সব জায়গায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তারা নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। এখন আর আগের মতো দল বেঁধে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে না তারা। কাউকে টার্গেট করলে সুবিধামতো সময়ে হামলা করে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেতা মোহাম্মদ আমিন বলেন, কোনো একটি সশস্ত্র গ্রুপ একটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আরেকটি গ্রুপ পাল্টা হামলা করে সেই এলাকার দখল নেয়ার চেষ্টা করে। মূলত ক্যাম্পে ফের আরসা-আরএসও’র মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা বাড়ছে। এছাড়া মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পাঠানো নিয়েও এদের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে।
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ শামিম বলেন, ক্যাম্পে মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) ও স্বেচ্ছাসেবীদের কারণে অপরাধীদের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। তাই অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এছাড়া ক্যাম্পে নতুন করে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কোনো সন্ত্রাসী দলকে আমরা এখানে ঠাঁই হতে দেবো না। পাশাপাশি ক্যাম্প এলাকায় টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গারা অংশ নেয়ার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে শুনেছেন উখিয়ার পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ক্যাম্পগুলোতে এখন প্রধান ৪-৫টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে। তাদের মধ্যে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ ও মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে ব্যাপক দ্বন্দ্ব রয়েছে। যার ফলে ক্যাম্পের সাধারণ মানুষসহ স্থানীয় লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া ক্যাম্পে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রাতের বেলার স্থানীয় বসতিদের গ্রামে ঘোরাঘুরি করছে। এতে আমাদের জীবন নিয়ে আমরা খুব শঙ্কিত। তাই সরকারের কাছে দাবি, এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হোক।
আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আসলে আমাদের জীবন গন্তব্যহীন, একূল-ওকূল কিছুই নেই। ক্যাম্পে দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারী-শিশুদের নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। থাকা-খাওয়ার নেই তেমন কোনো অবস্থা। দিন দিন হত্যার মতো ঘটনা বাড়ছে, তাই এখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েই প্রতিনিয়ত চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মো. আমির জাফর জানিয়েছেন, শরণার্থী শিবিরে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ